গাড়ির মতো তেল ছাড়া চলতে পারে না, তেমনি ভিটামিন ছাড়া মানুষের সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব নয়। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স আটটি ভিটামিনের সমন্বয়ে গঠিত। একে 'শক্তির কেন্দ্র' বলাও যায়। আমাদের শরীরে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম সম্পাদন করে।
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স কী?
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স একটি সাপ্লিমেন্ট, যা আটটি ভিন্ন ধরনের বি ভিটামিনের সমন্বয়ে গঠিত। এটি শরীরের কোষের কার্যক্রমে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বি কমপ্লেক্সের অন্তর্ভুক্ত ভিটামিনগুলো হলো থায়ামিন (ভিটামিন বি১), রিবোফ্লাভিন (ভিটামিন বি২), নিয়াসিন (ভিটামিন বি৩), প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৫), পাইরিডক্সিন (ভিটামিন বি৬), বায়োটিন (বি৭), ফোলেট (বি৯) এবং কোবালামিন (ভিটামিন বি১২)। যদি খাদ্য থেকে এই পুষ্টি উপাদানগুলি না পাওয়া যায়, তবে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা প্রয়োজন হতে পারে।
ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের সুবিধাসমূহ-
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স আমাদের দেহের এনজাইমগুলোর কার্যক্রমে সহায়তা করে। এটি শর্করা ভাঙতে সাহায্য করে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে পুষ্টি পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বি কমপ্লেক্সের অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানুন:
১. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে
ভিটামিন বি মস্তিষ্কের সুস্থতা রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন বি থাকলে শরীর, মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ভিটামিন বি৬ স্নায়বিক রোগ পার্কিনসন প্রতিরোধে সহায়ক।
২. ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধ করে
ভিটামিন বি৩ সহজেই পানির সাথে মিশে যায় এবং ত্বকের প্রাকৃতিক উপাদানের সাথে সমন্বয় করে কাজ করে। এই ভিটামিনটি আমাদের শরীরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উৎপন্ন হয় না, তাই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা প্রয়োজন। তবে যকৃৎ ও মাশরুমে কিছু পরিমাণে বি৩ পাওয়া যায়। এটি ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে সক্ষম। পাশাপাশি, রিবোফ্লাভিন বা ভিটামিন বি২ একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা ফ্রি র্যাডিক্যাল ধ্বংস করে ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
৩. হতাশা ও মানসিক চাপ হ্রাস করে
যদি কারও শরীরে বি ভিটামিনের অভাব থাকে, তবে তিনি বিষণ্নতা এবং তীব্র মানসিক চাপের শিকার হতে পারেন। ভিটামিন বি৫ এবং বি৬ শরীরে হরমোনের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, যেমন মানসিক চাপের হরমোন কর্টিসল, যা ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৪. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
বি ভিটামিন, বিশেষ করে বি৬, বি৯ এবং বি১২, হোমোসিস্টাইনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, যা কার্ডিওভাস্কুলার রোগের (সিভিডি) ঝুঁকি হ্রাস করে। বি ভিটামিন আমাদের শরীরে নতুন লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে, যা টিস্যু এবং শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়।
৫. স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে
শরীরে ভিটামিন বি১২ এর অভাব হলে রক্তাল্পতা, মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে। এর ফলে বিষণ্নতা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যও দেখা দিতে পারে। অনেক সময় চিকিৎসকেরা নিউরোপ্যাথি রোগীদের ভিটামিন বি১২ গ্রহণের পরামর্শ দেন। তবে যাঁদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাঁদের জন্য বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন।
৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
ভিটামিন বি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, পাইরিডক্সিন বা বি৬ শ্বেত রক্তকণিকা এবং টি-কোষ (লিম্ফোসাইট ইমিউন কোষ, যা শরীরকে প্যাথোজেন ও ক্যান্সার কোষ থেকে রক্ষা করে) উৎপাদনে সহায়তা করে।
৭. অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগ (আইবিডি) দ্বারা আক্রান্ত, তাঁদের জন্য অতিরিক্ত ভিটামিন বি প্রয়োজন। যদি আপনার অন্ত্রের সমস্যা থাকে, তবে ভিটামিন বি-সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।
৮. হজমে সহায়তা
ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের একটি প্রধান সুবিধা হলো এটি হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। ভিটামিন বি৬ কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং চর্বির বিপাকের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা হজমে সহায়তা করে এবং ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে।,
Post a Comment