খাবারের সাথে সম্পর্কিত আবেগকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন

 

খাবারের সাথে সম্পর্কিত আবেগকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেনছবি: সংগৃহিত

 

আপনার পছন্দের খাবারগুলো গ্রহণে যদি নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারেন, তাহলে তা বিপদজনক হতে পারে, এমন পরামর্শ চিকিৎসকরা প্রায়ই দিয়ে থাকেন। তবে পুষ্টিবিদদের মতে, আবেগের কারণে খাবার খাওয়া সবসময় নেতিবাচক নয়। তবে আপনার প্রিয় চকোলেট, চিপ কুকিজ বা অন্য যেকোনো খাবার খেতে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের রকভিলে দ্য ইটিং ডিসঅর্ডার সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা জেনিফার রোলিন উল্লেখ করেছেন যে, যখন আবেগ আপনার খাবার গ্রহণের ওপর প্রভাব ফেলে, তখন সেটি সংবেদনশীল খাওয়ার রূপ নেয়, যা প্রায়শই ভীতিকর এবং অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায়। তবে, আমরা অস্বীকার করতে পারি না যে, প্রতিটি খাবারের সাথে একটি স্বাস্থ্যকর সম্পর্কের গুরুত্ব রয়েছে।

অতএব, যখন খাবার আপনার জন্য আবেগময় এবং অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে, তখন চিকিৎসকের কঠোর নির্দেশনা এবং আপনার পরিবারের লজ্জা-ভিত্তিক কৌশলগুলি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, যাতে আপনি খাবারের প্রতি আবেগের পরিবর্তে বিবেকের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। পেনসিলভানিয়ার ডিসঅর্ডার ডায়েটিশিয়ান ডেইজি মিলার এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন যে, আবেগপূর্ণ খাওয়ার সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা এবং খাবারের সাথে স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য এর বিরুদ্ধে না গিয়ে কীভাবে এগোতে হবে।

http://www.healthy24.xyz/

জেনিফার রোলিন উল্লেখ করেন, খাদ্য স্বাভাবিকভাবেই আবেগের সাথে যুক্ত। আপনি সম্ভবত একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে কিছু নির্দিষ্ট খাবারের কথা ভাবতে পারেন, যা আপনার সাথে সামাজিকভাবে সম্পর্ক স্থাপন করে। যেমন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিয়ের অনুষ্ঠানে কাচ্চি, বিরিয়ানি, কালো ভুনা ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা মনে পড়ে। মিলার বলেন, যখন আমরা খাবার সম্পর্কে চিন্তা করি, তখন আমরা দেখতে পাই যে আমাদের জীবন খাদ্যের চারপাশে ঘোরে। খাবার সত্যিই সান্ত¡নাদায়ক হতে পারে, এবং আমরা অনেকেই আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে এমন খাবারের চারপাশে ঐতিহ্য গড়ে তুলি যা নস্টালজিক এবং আবেগপ্রবণ।

মানুষের দেহ খাদ্য উপভোগের জন্য তৈরি, তাই এটি বোঝায় যে যখন আপনি শক্তিশালী আবেগ অনুভব করেন, তখন আপনি এমন কিছু খাবার গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন যা স্বাদে বা খেতে ভালো লাগে।

আপনি কি একটি কঠিন দিন বা একটি বিশেষ উপলক্ষ উদযাপনের পর সুস্বাদু কিছু খাওয়ার জন্য প্রস্তুত? অথবা আপনি কি একটি বড় সমস্যা এড়িয়ে চলছেন? খাবার সম্পর্কে আমাদের ধারণা কখনোই সম্পূর্ণ সঠিক নয়, কারণ আমরা জানি না কারো জীবনে আসলে কী ঘটছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের খাবারের প্রতি আবেগকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা উচিত নয় এবং আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয়তা মেটানোর জন্য খাবারকে শুধুমাত্র জ্বালানী হিসেবে দেখা উচিত নয়। সবসময় এই ধারণা কার্যকরী হবে না। রোলিন উল্লেখ করেন, খাদ্য সত্যিই আমাদের মস্তিষ্ক এবং দেহের জন্য শক্তির উৎস, তবে এটি তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু।

রোলিন আরও বলেন, কখনো কখনো, যখন মানুষ শুধুমাত্র পুষ্টিকর খাবারের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ দেয়, তখন তারা খাবারের সঙ্গে যুক্ত আনন্দ, সামাজিকতা এবং সম্পর্কের গুরুত্বকে উপেক্ষা করে। 

নর্থ ক্যারোলিনার শার্লটের নিবন্ধিত ডায়েটিশিয়ান নাটালি মোকারি উল্লেখ করেছেন যে, অতিরিক্ত বিধিনিষেধ প্রায়শই দ্বিধাগ্রস্ত খাওয়ার প্রবণতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। খাবার সম্পর্কে অযথা চিন্তা করা উচিত নয়, তবে যখন আপনি ভাবেন যে আপনি কিছু খাবার খাচ্ছেন এবং এটি আপনার জন্য নিষিদ্ধ, তখন সেই চিন্তাভাবনা আপনাকে খাবারের প্রতি আনন্দের পরিবর্তে উদ্বেগের মধ্যে ফেলতে পারে।
দ্বিধাগ্রস্ত খাওয়ার পরিস্থিতিতে চিন্তা করার সময় আপনার পছন্দের খাবার গ্রহণের জন্য একটি সীমা থাকা উচিত, কিন্তু যখন আবেগজনিত খাওয়ার সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, তখন সেই সীমা নিয়ে ভাবা প্রয়োজন। কঠিন আবেগের মোকাবিলা করার জন্য আপনি কতবার খাচ্ছেন এবং সেই আবেগগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনার কাছে কি বিকল্প কৌশল রয়েছে, তা মনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কিছু সতর্কীকরণ চিহ্ন রয়েছে যা নির্দেশ করে যে আপনি খাবারের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন এবং এর ফলে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে অল্প সময়ের মধ্যে অধিক পরিমাণে খাওয়া, নিয়ন্ত্রণ হারানো, অপরাধবোধ ও লজ্জা অনুভব করা, গোপনে খাওয়া এবং প্রায়শই খাওয়ার অভ্যাস। এসব লক্ষণ আপনাকে সীমার বাইরে নিয়ে যেতে পারে। যদি আপনি খেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধের চেয়ে বেশি খান এবং পরে ঝুঁকি এড়াতে বাধ্যতামূলক ব্যায়ামে নিযুক্ত হন, তবে এটি নির্দেশ করে যে আপনার খাবারের সাথে সম্পর্ক সমস্যাযুক্ত হয়ে উঠেছে, যা আপনি হয়তো বুঝতে পারছেন না।

একটি স্বাস্থ্যকর ও নমনীয় সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং খাদ্যের প্রতি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা নিরাপদ। আপনি কি নিজেকে সব ধরনের খাবার খাওয়ার অনুমতি দিতে পারেন, নিয়ন্ত্রণের বাইরে না গিয়ে?

আপনি সম্ভবত একঘেয়েমি বা মানসিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছেন। হতে পারে আপনি একটি পারিবারিক রীতির সাথে যুক্ত হতে চান অথবা জন্মদিনের কেকের মাধ্যমে একটি বিশেষ উপলক্ষ উদযাপন করতে চান। এই পরিস্থিতিতে, মূল বিষয় হলো আপনার মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি এবং খাদ্যের প্রতি আপনার সম্পর্ককে বিচার করার পরিবর্তে কৌতূহল ও অনুসন্ধিৎসার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা। মিলার উল্লেখ করেন, মানুষ খাদ্য সম্পর্কে এমনভাবে চিন্তা করতে পারে যেন তারা নিজেদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহকারী গোয়েন্দা। এটি কি এমন কিছু যা আপনার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে? এটি কি এমন কিছু যা আপনি শুধুমাত্র খাদ্যের মাধ্যমে মোকাবেলা করছেন? 

এখানে কি এমন আরও গভীর বিষয় রয়েছে যা নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন?

আপনি যদি খাওয়ার অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে সংগ্রাম করছেন বা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন, তবে একজন থেরাপিস্ট বা ডায়েটিশিয়ানের সাহায্য নেওয়া উপকারী হতে পারে, বিশেষ করে যারা বিশৃঙ্খল খাওয়া, ওজন এবং অ্যান্টি-ডায়েট বিষয়ক ক্ষেত্রে কাজ করেন। মিলার উল্লেখ করেন, সঠিক পেশাদারের কাছে যাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে আপনি খাবার সম্পর্কিত আপনার অনুভূতিগুলোকে সঠিকভাবে প্রক্রিয়া করতে পারেন এবং লজ্জা বা অপরাধবোধ অনুভব না করেন। কখনোই মনে করবেন না যে আপনি খারাপ বা ভুল কিছু করছেন।

সূত্র : সিএনএন.

Post a Comment

Previous Post Next Post

Smartwatchs