পরিস্থিতি আরও জটিল হলে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে
বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি গতকাল মঙ্গলবার আরও শক্তিশালী হয়ে প্রথমে নিম্নচাপে এবং পরে সন্ধ্যা নাগাদ গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।
এটি ক্রমাগত বঙ্গোপসাগরে শক্তি সঞ্চয় ও বৃদ্ধি করে আজ বুধবার আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এই মৌসুমের নতুন ঘূর্ণিঝড়টির নাম হবে ‘দানা’, যা কাতারের দেওয়া নাম এবং এর অর্থ ‘স্বাধীনতা’।
বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর নামের তালিকা থেকে সংশ্লিষ্ট সমিতি ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের নাম নির্ধারণ করে থাকে। এদিকে, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের উপকূল ক্রমশ উত্তাল হয়ে উঠছে এবং সমুদ্র বন্দরগুলোকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত প্রদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গভীর নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসের কারণে বিশেষ করে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে এবং অনেক স্থানে গা-জ্বলা ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। কোথাও কোনো বৃষ্টিপাতের চিহ্ন নেই।
গতকাল সন্ধ্যায় আবহাওয়া বিভাগের (বিএমডি) বিশেষ বুলেটিনে (সিরিয়াল নম্বর-২) আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক উল্লেখ করেন যে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং এর নিকটবর্তী উত্তর আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আরও ঘনীভূত হয়ে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় গভীর নিম্নচাপে রূপান্তরিত হয়েছে। এর পূর্বে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং এর কাছাকাছি উত্তর আন্দামান সাগর এলাকায় একটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছিল।
সন্ধ্যায় গভীর নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৪০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৬০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৫৫ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে অবস্থান করছে।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) তাদের পূর্বাভাস বুলেটিনে উল্লেখ করেছে যে, আজ বুধবার নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার, এই ঘূর্ণিঝড়টি দক্ষিণ ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের নিকটবর্তী হতে পারে। এটি ক্রমশ উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ হিসেবে শক্তিশালী হতে পারে।
পরবর্তীতে, বৃহস্পতিবার রাতের শেষের দিকে অথবা শুক্রবার ভোরে, ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ বরাবর পুরি এবং সাগরদ্বীপের মধ্য দিয়ে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এই ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বা তার আশেপাশে হতে পারে। এ সময় সুন্দরবনের ভারত ও বাংলাদেশের অংশেও এর প্রভাব পড়তে পারে। তবে, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আছড়ে পড়ার পূর্বে যে কোনো সময় তার গতিপথ পরিবর্তন হতে পারে।
আজ বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক উল্লেখ করেছেন যে, খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগের কিছু স্থানে এবং রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কয়েকটি স্থানে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে। বৃহস্পতিবার সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্থানভেদে ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে।
Post a Comment