প্রকৃতি ও প্রযুক্তির অসাধারণ সমন্বয়ে যমুনার তীরে দেশের দীর্ঘতম রেল সেতু এখন উদ্বোধনের প্রান্তে।
প্রমত্ত যমুনা নদীর উপর নির্মিত এই সেতুটি যমুনা সেতুর থেকে মাত্র ৩০০ মিটার দূরে অবস্থিত। প্রায় ৯৮ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, এবং মাত্র ২ শতাংশ কাজ শেষ হলেই আসন্ন ডিসেম্বর মাসে এই স্বপ্নের রেল সেতুটি চালু হতে পারে।
এই সেতু চালু হলে প্রতিদিন ৮৮টি ট্রেন দ্রুত গতিতে সেতু পারাপার করতে সক্ষম হবে, যা সময় সাশ্রয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিটের সুবিধা দেবে। সেতুর পূর্ব প্রান্তে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে এবং পশ্চিম প্রান্তে সিরাজগঞ্জে নতুন রেল স্টেশন নির্মাণের কাজও প্রায় শেষের দিকে। বর্তমানে নির্মাণকর্মীরা শেষ মুহূর্তের রঙ-তুলির কাজ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন।
রেল সেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য তারা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে একাধিক পরীক্ষামূলক ট্রেন চালিয়ে সেতুর প্রস্তুতি পর্যালোচনা করা হয়েছে।
এই রেল সেতুটি সাধারণ ট্রেনের পাশাপাশি দ্রুতগতির ট্রেন চলাচলের জন্য উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে ঘণ্টায় সর্বাধিক ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে সক্ষম হবে। তবে উদ্বোধনের প্রথম বছরে ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার সীমাবদ্ধ রাখা হবে।
২০১৬ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। পরবর্তীতে এর মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ টাকায়। এর মধ্যে দেশীয় অর্থায়ন ২৭.৬০ শতাংশ এবং জাপানের জাইকা ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে, যা মোট ব্যয়ের ৭২.৪০ শতাংশ।
এই প্রকল্পের আওতায় ডুয়েলগেজ এবং ডাবল ট্র্যাকসহ মোট ৪.৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রেল সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুর দুই পাশে ০.০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট এবং ৭.৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে। রেলপথের পাশাপাশি গ্যাস সঞ্চালন লাইনের স্থাপনাও নিশ্চিত করা হয়েছে।
১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হলেও ২০০৮ সালে সেতুর গঠনে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়।
বর্তমানে দিনে প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে যমুনা সেতু পারাপার করছে। দীর্ঘদিনের এই সমস্যার সমাধানে নতুন রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার, যার কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে।
নতুন রেল সেতুর এই প্রকল্পটি দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।
Post a Comment